শুক্রবার, ২০ মে, ২০১১

তথ্য অধিকার আইনে জনগণের কী লাভ, সরকারের কী লাভ?


পৃথিবীতে হজরত মুহাম্মদই (সাঃ) সর্বপ্রথম তথ্য অধিকার আইনের প্রবর্তন করেন, অনেকেই আমরা অনুভব করিনা। অথচ তিনি তার ৬৩বছরের জীবন ও শাসনামলে এ আইনের সফল বাস্তবায়নের কাজটি করে গেলেও আধুনিক দুনিয়ায় তা চালু হয়েছে মাত্র সপ্তদশ শতাব্দীতে। তিনি ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজজীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও দেখিয়ে গেছেন তথ্য অধিকার আইনের কার্যকারিতা। তাইতো তার প্রশাসনে ছিলো কী স্বতস্ফূর্ত অথচ কঠোর জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও সততা। ‘একটি আয়াত বা বাক্য হলেও তোমরা তা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দাও’ হাদিসটি ছিলো তার তথ্য অধিকার আইনের প্রথম শ্লোগান। কোন তথ্যগোপণে তিনি আদৌ বিশ্বাসী ছিলেন না জবাবদিহিতার স্বার্থেই। তাই মূল আলোচনা শুরুর পূর্বে ছোট্ট একটি ঘটনা বলি। হজরত ওমরের (রাঃ)শাসনামলে সরকারীভাবে সবাইকে বিনামূল্য কাপড় বিতরণ করা হয়। খলিফা হিসেবে ওমরও সে কাপড় পেয়েছিলেন। এরপরের শুক্রবার তিনি মসজিদে জুম্মার নামাজের খতিব ও ইমাম হিসেবে খুতবাহ দিতে উঠলে এক প্রতিবাদী সাহাবী দাঁড়িয়ে প্রকাশ্য জনসমক্ষেই তার কাছে কৈফিয়ত চান, ‘হে আমিরুল মু’মিনুন--আমরা যে কাপড় পেলাম, তা দিয়েতো আমাদের কারুরই জামা বানানো সম্ভব হয়নি? অথচ আপনার এতো লম্বা জামা সম্ভব হলো কিভাবে, তা-ই আগে বলুন, তারপর খুতবা শুরু করুন। ওমর কিন্তু না রেগে হেসেই জবাব দিলেন, ‘আমার ছেলেই এর জবাব দিচ্ছে;’ তখন উপস্থিত তার পুত্র দাঁড়িয়ে জানালেন--আমি আমার ভাগের কাপড়টি আব্বাকেই দিয়েছিলাম যাতে আমার না হলেও অন্ততঃ তার জামাটি হতে পারে! তাহলে বুঝুন, জবাবদিহিতা আর স্বচ্ছতা কাকে বলে? আর এখনকার সরকারপ্রধানকে কি এভাবে কেউ বলার সাহস রাখে নাকি বলার সুযোগ আছে?

যাহোক, ‘স্বাধীন প্রেস আইন’ এর মাধ্যমে ১৭৬৬ সালে সুইডেনে প্রথম শুরু হয় তথ্যপ্রবাহে জনগণের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি। এরপর বিশ্বের ৯০টি দেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত করা হয় স্বাধীন প্রেস আইন। সুইডেন ছাড়াও আরো দুটি দেশে এই স্বাধীন প্রেস আইন চালুর পর চতুর্থ দেশ হিসেবে ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এ আইন গৃহীত হয়। এরপর ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যে, ২০০২ সালে পাকিস্তানে এবং ২০০৫ সালে ভারতেও এটি ‘ফ্রিডম অব ইনফরমেশন আইন' নামে গৃহীত হয়। চীন ‘ওপেন গভর্নমেন্ট ইনফরমেশন রেগুলেশন’ নামে এ প্রক্রিয়ায় সামিল হয় ২০০৭ সালে।

বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা-বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত বলেই তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারও তাদের মৌলিক মানবাধিকারের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণকে ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেই সরকার নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনেই 'তথ্য অধিকার আইন-২০০৯' পাশ করেছে।

তবে বাংলাদেশে এ আইনটি আমরা দীর্ঘপ্রক্রিয়ার ফসল হিসেবেই পেয়েছি। ১৯৮৩ সালে তথ্য অধিকার আইনের পক্ষে প্রেস কমিশনের সুপারিশ এবং ২০০২ সালে আইন কমিশনের কার্যপত্রের সূত্র ধরে সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনের দাবী জোরদার হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আইন কমিশন বিভিন্ন দেশের আইন পর্যালোচনা করে ২০০৩ সালে তথ্য অধিকার আইনের একটি খসড়া সরকারের নিকট পেশ করে। অতপর আর কোন অগ্রগতি না হলেও বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথ্য অধিকার আইনের খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে ৬/১/২০০৮ তারিখে একটি কমিটি গঠণ করে। অবশেষে ২০/১০২০০৮ তারিখে ‘তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ-২০০৮’ জারী করা হয়, যা বর্তমান সরকার আইনে পরিণত করে।

এই আইনের সঠিক প্রয়োগের ফলে সরকার ও জনগনের মাঝে সেতুবন্ধ রচনার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে দূর হবে দুর্নীতি। এই আইন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতাসৃষ্টিতে বেশ সহায়ক হবে। তবে এক্ষেত্রে জনগনকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Promotion of Access to Information act, 2000 - South Africa

  PART 1 INTRODUCTORY PROVISIONS CHAPTER 1 DEFINITIONS AND INTERPRETATION Definitions 1. In this Act, unless the context otherwise indicates—...